কেন বিজয় দিবসের ৪৫ দিন পর মুক্ত হয়েছিল মিরপুর

কেন বিজয় দিবসের ৪৫ দিন পর মুক্ত হয়েছিল মিরপুর

১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্নসমর্পণ করায় নয়; মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করেছিলো বাংলাদেশ । কিন্তু ঢাকার মিরপুর শহর তখনও শত্রু মুক্ত হয়নি। অনেকেই এই এলাকাকে স্বাধীন বাংলাদেশের মধ্যে এক টুকরো পাকিস্তান বলে উল্লেখ করেন বলে জানা যায়, তার অবশ্য কারণও ছিল। কারণ তখন মিরপুরে বাস করতো বিহারিরা ;তারা স্বাভাবিক ভাবেই এই বিজয় মেনে নেয় নি।

ঢাকার মিরপুর এবং মোহাম্মদপুর একাকায় বিহারী ;এবং উর্দুভাষী মানুষ বেশি বাস করতো। ১৯৪৭ সালে ভারত থেকে পাকিস্তানে আসা বিহারী মুসলমানদের জন্য ;মিরপুর আবাসিক এলাকা বরাদ্ধ করা হয়।

মেজর জেনারেল (অব) মুহাম্মদ ইব্রাহিমের লিখিত বই “সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে আটাশ বছর” তে তিনি এই কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন যুদ্ধ শুরু হলে বিহারীরা বিনা দ্বিধায় পাকিস্তানকে সমর্থন দেয়। অনেক যুবক রাজাকারে যোগ দেয়। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে নিজেদের রক্ষার জন্য সশস্ত্র ;ও সংগঠিত করে তোলে। যুদ্ধ চলাকালীন প্রায় ২০ হাজার বিহারীকে প্রশিক্ষন দিয়ে সিভিল আর্মড ফোর্স গঠন করা হয়।

১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্নসমর্পণ করলেও; সিভিল আর্মড ফোর্স আত্নসমর্পণ করে নি। তারা আশ্রয় নেয় মিরপুরে। পাকিস্তানী বাহিনী পিছু হটার সময় দেশের বিভিন্ন স্থানের বিহারীরা স্থান নেয় মিরপুরে। স্বাভাবিকভাবেই মিরপুর বিহারীদের শক্ত ঘাটিতে পরিণত হয়।

আরো পড়তে পারেন বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত সংঘর্ষ ও বড়াইবাড়ি আক্রমণ

প্রথম দিকে বিহারীদের নিয়ে কোন চিন্তা ছিল না কারো। কিন্তু অস্ত্র জমা নিতে গেলেই বাধে বিপত্তি। ২৯ জানুয়ারি মিরপুরে কারফিউ জারি করা হয়। দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেনা ও পুলিশ চিন্তাও করতে পারেনি তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে। পুলিশ সেখানে গিয়ে মাইকিং করে অস্ত্র জনা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিহারীরা আগে থেকেই কৌশল অবলম্বন করে রেখেছিলো। তারা প্রতিটি ঘরের দেয়াল; ছিদ্র করে অস্ত্র তাক করে রাখে। হঠাৎ বেলা ১১ টার দিকে আকস্মিকভাবে গুলি বর্ষণ হতে থাকে। হতভম্ব হয়ে যায় সেনা; ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। তাদের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেদিন আর আক্রমণ করা হয় নি।

৩০ থেকে ৩১ জানুয়ারি তীব্র গোলাগুলি চলে। প্রতিরোধ গড়ে তোলে বিহারীরা। সন্ধ্যার পর মর্টার ;ও আর্টিলারি ব্যবহার করে শক্তি বৃদ্ধি করে সেনাবাহিনী। অপারেশনের দ্বায়িত্বে থাকা মোখলেসুর রহমান বলেন, ৩১ জানুয়ারি একটা ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছে যা অকল্পনীয়। নয় মাসের যুদ্ধে এটা আমরা কখনো ফেস করি নাই। তীব্র যুদ্ধের পর ৩১ জানুয়ারী সকালে আত্নসমর্পণ করে বিহারীরা। এ যুদ্ধে প্রায় ৪৮ জন সেনা ও ৫৪ জন পুলিশ নিহত হয়। বিহারী অধ্যুষিত এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় ১১ ট্রাক অস্ত্র ।

উল্লেখ্য জহির রাযহান ৩০ জানুয়ারি ; তার ভাই শহিদুল্লাহ কায়সারকে খুজতে মিরপুর যান। তিনি ও আর ফেরত আসেন নি। বিহারীরা তাকে মেরে লাশ সরিয়ে ফেলে।

আমাদের সাথে যুক্ত হতে লাইক দিন নববহ্নি পেজ এ

Check Also

পহেলা বৈশাখ

বাংলা পহেলা বৈশাখ ও বাঙালির চেতনা ও সংষ্কৃতি

বাংলা পহেলা বৈশাখ লোক সমাজের সাথে নাগরিক জীবনের সেতুবন্ধন পহেলা বৈশাখ। ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে জীবনে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *