মুহাম্মদ আলীঃবক্সিং জগতের অনবদ্য এক চ্যাম্পিয়ন

ইতিহাস বিখ্যাত বক্সারদের যদি তালিকা করতে বলা হয় ;তবে মুহাম্মদ আলী এর নাম উঠে আসবে সবার আগে। তাকে চিনেনা এমন মানুষ হয়ত কমই পাওয়া যাবে। মার্কিন বংশভূত এই বক্সার তার কাজের ; মাধ্যনে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছেন। বক্সিং রিং এর ভিতর যেমন তিনি সফল ;তেমনি ব্যক্তি হিসেবে ছিলেন অণুপ্রেরণাদায়ক। চলুন জেনে আসা যাক তার জীবন সম্পর্কে।

জন্ম

১৯৪২ সালের ১৭ জানুয়ারি এক খ্রিস্টান পরিবারে জন্ম তার। তার পিতা রং এর মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করতেন। জন্ম সূত্রে তার নাম, ছিল ক্যাসিয়াস ক্লে। ১২ বছর বয়সে তিনি বক্সিং এর প্রশিক্ষণ শুরু করেন। লুইভিসার পুলিশ অফিসার তথা বক্সিং প্রশিক্ষক তাকে বক্সিং শিখতে বলেন; যখন তিনি ক্লে কে এক সাইকেল ;চোরকে মারতে দেখেন। এরপর কাটম্যান চাক বোডাক ;এর কাছে বক্সিং প্রশিক্ষণ নেন।

১৯৫৪ সালে মুহাম্মদ আলী অপেশাদার বক্সিং ;এ নামেন। এখানে ১০০ বার জয়লাভ করেব অ ;মাত্র ৫ বার পরাজিত হন। ১৯৬০ এর গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে বক্সিং এ ;লাওট হেভিওয়েট বিভাগে সোনা জেতেন।

আলীর উদাহরণ ও কাজকর্ম অনেক কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান ;এবং অন্যদের অনুপ্রাণিত করেছিল বটে। কিন্তু তিনি যখন ভিয়েতনাম যুদ্ধের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, তিনি যুক্তিযুক্তভাবে দেশের সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি হয়েছিলেন, অনেক মৃত্যুর হুমকি পেয়েছিলেন। সেই সাথে যারা আলিকে সমর্থন করেছিল তাদেরও হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

মুহাম্মদ আলী ১৯৬০ এর শেষ দিকে পেশাদার বক্সিং এ নামেন। প্রথম দিকে তিনি বেশ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তবে একের পর এক জয় তাকে শক্ত হতে সাহায্য করে। ১৯৬৩ সালের শেষ পর্যন্ত তিনি ১৯ টি জয়ের রেকর্ড গড়েন। যার মধ্যে তার প্রশিক্ষক আর্চি মুর ও ছিলেন।১৯৬৩ সালের ১৩ ই মার্চে ডগ জোন্সের সাথে কঠিন এক লড়াই হয়েছিল। হেনরি কুপারের সঙ্গে লড়াই এ কুপারের হুকে মাটিতে পড়ে যান, কিন্তু ঠিক সময়ে ঘন্টার আওয়াজে বেচে যান।

ভিয়েতনাম যুদ্ধ

ভিয়েতনাম যুদ্ধে না যাবার কারণে ;তিনি ১৯৬৭ সালে ৩ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন। তার যুক্তি ছিল কোরআন যুদ্ধ সমর্থন করে না। আল্লাহ বা নবীর নির্দেশ ছাড়া তিনি যুদ্ধে যাবেন না। কোন ভিয়েতকং এর সাথে তার বিরোধ নেই, কেউ তাকে কালো বলে গালি দেয় নি। তিনি তার নাম পরিবর্তন করে ক্যাসিয়াস এক্স রাখেন। এ সময় তিনি ঘোষণা দেন তিনি নেশন অব মুসলিম গোত্রের সদস্য। ১৯৬৭ সালে তিনি এরনি তেরেলের সাথে লড়াই এ নামেন। তেরেল তাকে ম্যাচের আগ ক্লে বলে অপমান করলে তিনি প্রতিশোধ হিসেবে তাকে রক্তাক্ত করেন।

আরো পড়তে পারেন শুভ জন্মদিন কল্পনা চাওলা

১৯৭১ সালে আলী শতাব্দীর সেরা লড়াইয়ে নামেন। প্রতিপক্ষ ছিল জো ফ্রেজিয়ার। আলোচিত এ লড়াই এ আলী পরাজিত হন ;এবং এটিই তার জীননের প্রথম পরাজয় পেশাদার বক্সিং এ । ১৯৭৪ সালে আলী রাম্বেল ইন দ্যা জাংগল ;নামে পরিচিত লড়াই এ নামেন। প্রতিপক্ষ ছিল জর্জ ফোরম্যান। নাটকীয় ভাবে আলী তার সাথে জয় লাভ করেন ৮ম রাউন্ডে; ও তাকে নক আউট করেন। কারণ আলীর সমর্থকরাও আলীর জয়ের সম্ভবনা দেখেন নি।

আলী এবং জো ফ্রেজিয়ারের তৃতীয় ও শেষ লড়াই

এ লড়াই অনুষ্ঠিত হয় ম্যানিলায় ১ অক্টোবর ১৯৭৫ সালে। এ লড়াই “ম্যানিলায় থ্রিলা” নামে পরিচিত ছিল। ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল এ লড়াই হয়েছিল। প্রথম রাউন্ড এর খেলায় আলি আক্রমণাত্মক, চলমান সেই সাথে, ফ্রেজিয়ারের সাথে আঘাতের বিনিময় করেছিলেন। যার ফলে আলি শীঘ্রই ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং “দড়ি-এ-ডোপ” কৌশল অবলম্বন করতে থাকেন। লড়াই এর মাঝে আলী বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফ্রেজিয়ারকে নিরলসভাবে আক্রমণ করার শাস্তি গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ১২ তম রাউন্ডে ফ্রেজিয়ার ক্লান্ত হতে শুরু করে, এবং আলী বেশ কয়েকটি ধারালো আঘাত করে বাম ও ডান চোখের উপর। যার ফলে ফ্রেজিয়ারের দৃষ্টি কমে যায়, ও আলি ১৩ তম এবং ১৪ তম রাউন্ডে আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। ১৫ তম রাউন্ডে ফ্রাজিয়ারের প্রতিবাদ সত্ত্বেও তার প্রশিক্ষক এডি ফচ চূড়ান্ত রাউন্ডের জন্য ঘণ্টাটির উত্তর দিতে অনুমতি; না দিলে যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে আলী জয় লাভ করেন ও শিরোপা পুনরুদ্ধার করেন।

ইসলাম গ্রহণ

১৯৭৫ সালে আলী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ক্যাসিয়াস ক্লে হয়ে গেলেন মুহাম্মদ আলী। সে বছরই তিনি ফ্রেজিয়ারের সাথে লড়াইয়ে তার শিরোপা পুনরুদ্ধার করেন।১৯৮০ সালে ল্যারি হোমসের সাথে লড়াইয়ে,যিনি আলীর শিষ্য ছিলেন। ১১ রাউন্ড পর আলী পরাজিত হন। এই লড়াইয়ে মস্তিষ্কে আঘাত পান ও ১৯৮১ সালে অবসর গ্রহণ করেন। আলী নিসন্দেহে সর্বকালের সেরা বক্সার,যিনি ৫৬ টি জয় ৩৭ টি নকাউটে ও ৫ টি মাত্র পরাজয় নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করেন।

অবসরের পর তিনি নিজেকে মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত রেখেছিলেন। বিশ্ব শান্তি; প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। ৩২ বছর পারকিনসন্স রোগে ভোগার পর ২০১৬ সালের ৩ জুন ;এই বিখ্যাত বক্সার মারা যান।

আমাদের সাথে যুক্ত হতে লাইক দিন নববহ্নি পেজ এ

Check Also

চেঙ্গিস খান

চেঙ্গিস খান ও মঙ্গোলদের উত্থান

চেঙ্গিস খান মঙ্গোল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং; যা তিনি ১২০৬ সাল থেকে ১২২৭ সাল পর্যন্ত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *