ইরাক ও কুয়েতের মধ্যে বহু বছর ধরে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ হয়ে আসছিল। দুই দেশেই ছিল তেল রপ্তানির উপর নির্ভরশীল। ইরাকের অভিযোগ ছিল কুয়েত অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করে; তেলের দাম কমাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে।
দুইদেশের সম্পর্ক আরো খারাপ হয় ১৪০০ কোটি ডলার ঋণ নিয়ে। ইরানের সঙ্গে আট বছরের চলা যুদ্ধে ইরাক;এ অর্থ ধার করেছিলো কুয়েতের কাছ থেকে। কিন্তু অনেক বছর ধরে বিপর্যস্ত ;ইরান ঋণ শোধ করতে পারছিলো না। সাদ্দাম হোসেন চাইছিলেন কুয়েত; এ ঋণ মউকুফ করবে কিন্তু কুয়েত তা করতে অস্বীকার জানায়। এরপর পরিস্থিতি আরো মারাত্মক রূপ ধারণ করে।
এক রাতে ইরাকি হাজার হাজার সৈন্য ট্যাংক নিয়ে সীমান্ত পাড়ি; দিয়ে পুরো কুয়েত সিটি দখল করে নেয়। কুয়েতের প্রতিরক্ষা বাহিনী আত্নসমর্পণ করে। ১৯৯০ সালের ২ আগস্ট ইরাক সম্পূর্ণ কুয়েত সিটি ;নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। সাদ্দাম হোসেন কুয়েতকে ইরাকের; ১৯ তম প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা করে। ইরাকের এ অবৈধ দখল স্থায়ী ছিল সাত মাস।
আরো পড়তে পারেন সেনা শাসনের বেড়া জালে মিয়ানমার
২ আগস্ট কুয়েত দখল করলে বিভিন্ন দেশ তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইরাকের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। জাতিসংঘ অনুমোদিত ৩৪ দেশের সৈন্যরা ( কোয়ালিশন বাহিনী) ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।এ অপারেশনের উদ্দেশ্য হল ইরাকি সৈন্যদের হাত থেকে কুয়েতকে মুক্ত করা। এ অপারেশন এর নাম দেওয়া হয় “ডেজার্ট স্টর্ম”। অনেকে উপসাগরীয় যুদ্ধ নামেও চেনে। জর্জ ডাব্লিউ বুশ সৌদি আরবে সেনা মোতায়েন করে ;এবং অন্য দেশের কাছে সেনা পাঠাতে অনুরোধ করে।
বাংলাদেশ কোয়ালিশন বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। বাংলাদেশের হাতে তিনটি পথ খোলা ছিল প্রথমত ইরাকি বাহিনীর পক্ষ নেওয়া, দ্বিতীয়ত নিরপেক্ষ থাকা, তৃতীয়ত কোয়ালিশন বাহিনীর পক্ষ নেওয়া। শাহবুদ্দিন আহমেদ তৃতীয় পথ বেছে নেন এবং ২২০০ সৈন্য প্রেরণ করেন।
সাত মাস ধরা চলা এ যুদ্ধে কোয়ালিশন বাহিনীর জয় হয়; এবং কুয়েত দখলমুক্ত হয়। ইরাকি ও কুয়েতি সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। অনেক বেসামরিক লোকের প্রাণ যায়। এ যুদ্ধে কোয়ালিশন বাহিনীর ৩৮৫ জন নিহত ও ৭৭৬ জন আহত হয়। ইরাকি বাহিনীর প্রায় ২০০০০ জন নিহত ও ৮০০০০যুদ্ধবন্দি এবং ৭৫০০০ আহত হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারী ১৯৯১ সালে এ যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে।
আমাদের ফেসবুক লিংক নববহ্নি