মোনাকো ধনীদের বস্তি

Table of Contents

মোনাকো

ভাবুনতো আপনি ২ বর্গ কিলোমিটার প্রদক্ষিণ করে একটা দেশ পারি দিচ্ছেন । ভাবুন একটা দেশ যেখানে প্রায় সবাই মিলিয়নিয়ার কোনো দারিদ্রতা নাই । মিলিয়ন মিলিয়ন অর্থ উপার্জন করছেন অথচ আপনাকে আয়কর দেয়া লাগছে নাহ । আজগুবি ভাবনা মনে হচ্ছে তাই নাহ ।নাহ এটা আজগুবি নয় , সত্যি । পৃথিবীতে এমন একটি ধনীদের দেশ রয়েছে যার জনসংখ্যার ঘনত্বে বস্তির মত । যার নাম মোনাকো । অনেকেই বলে মোনাকো ধনীদের বস্তি ।

প্রাথমিক তথ্য

মোনাকো ইউরোপ মহাদেশের একটি রাষ্ট্র। দেশটি ফ্রান্সের দক্ষিণ পূর্বে ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত। এটি আয়তনে পৃথিবীর ২য় ক্ষুদ্রতম (১.৯৮ বর্গ কিঃমিঃ )। এর জনসংখ্যা আনুমানিক ৩২ হাজার।জনসখ্যার ঘনত্বে বিশ্বে ১ম ( প্রায় আঠারো হাজার প্রতি বর্গ কিঃমিঃ )। জনগনের মাথাপিছু আয় হল পৃথিবীর সর্বোচ্চ গুলোর একটি। যা সংখ্যায় ১,৮৬,৬৬১ । এতো জনসংখ্যার ঘনত্বে বেশি ও বেশিরভাগই মিলিয়নিয়ার হওয়ায় এটাকে ধনীদের বস্তি বলা হয় । মাথাপিছু আয় এত বেশি হওয়া সত্ত্বেও সে দেশের নাগরিকদের আয়কর দিতে হয় না ।

আরো পড়তে পারেন নাগারনো কারাবাখ – অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও তিক্ত শত্রুতা

অনন্য তথ্য

ফরাসি ভাষা বহুল ব্যবহৃত। পর্যটন শিল্প দেশটির প্রধান চালিকা শক্তি। এর প্রধান আকর্ষণ কাসিনো বা জুয়াখেলার আখড়াগুলি। সরকারীভাবে রাজধানী না থাকলেও সবচেয়ে বিত্তশালী চতুর্থাংশ মন্টি কার্লকে মোনাকোর কেন্দ্র বলা হয়। জুয়াখেলার অঙ্কের যে তত্ব প্রযোয্য সেই প্রোবাবিলটি বা সম্ভাবনা তত্বের এক বিখ্যাত পদ্ধতির নাম মন্টি কার্ল মেথড । মোনাকোয় ক্যাসিনো বৈধ হলেও তা নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য নিষিদ্ধ ।

মোনাকোর রাজনীতি মূলত রাজতন্ত্র নির্ভর ।সেখানে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রচলিত।মোনাকোর বর্তমান শাসকের নাম আলবার্ট দ্বিতীয়।তিনিই বর্তমানে মোনাকো শাসন করছেন। এর সামরিক ক্ষমতা খুবই সীমিত। বিদেশী শক্তির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার জন্য দেশটি প্রায় সম্পূর্ণরূপে প্রতিবেশী ফ্রান্সের উপর নির্ভরশীল হলেও দেশটিতে ১২০০ সৈন্য আছে ।

মোনাকোতে নাগরিকত্ব পেতে হলে কমপক্ষে দশ বছর থাকতে হবে । মোনাকোয় দ্বি-নাগরিকত্বের সুযোগ নেই । ধনীদের দেশ হলেও এখানে যে কোনো পণ্যের দাম অত্যাধিক বেশি । সাধারণত বিশ্বের বড় বড় ধনী ব্যক্তিরা এখানে অর্থ গচ্ছিত রাখতে আসেন ।

আমাদের সাথেযুক্ত হতে লাইক দিন নববহ্নি পেজ এ

মোনাকোর ইতিহাস

খ্রিস্টপূর্ব 6০০ সালে, মোনাকোর আশ্রয়স্থল বন্দরটিতে প্রাথমিকভাবে গ্রিকদেরা বাস করত । যারা এর নাম দিয়েছিল মনোকাইস । জনশ্রুতি আছে যে হারকিউলিস মোনাকোর মধ্য দিয়ে গিয়েছিল । তাকে সম্মান জানাতে একটি মন্দির নির্মিত হয়েছিল, মনোকাইকস মন্দির। ঐতিহাসিকভাবে, মোনাকো ফ্রান্সের অংশ ছিল । কিন্তু , ১২১৫ সালে এটি সম্রাট হেনরি ষষ্ঠের ভূমি ; অনুদানের মাধ্যমে জেনোয়া একটি উপনিবেশে পরিণত হয় । গ্রিমাল্ডি পরিবার ১২৯৭ সালে মোনাকোতে বসতি স্থাপন করে এবং পরিবারের পূর্বপুরুষরা 715 বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজত্ব নিয়ন্ত্রণ করে।

১৪৯১ সালে,

গ্রিমাল্ডি পরিবার আরাগোনের ফরাসি শাসক পরিবার থেকে মোনাকো অর্জন করে। মোনাকো তখন থেকে স্প্যানিশ, ইতালীয় এবং সার্ডিনিয়ান সুরক্ষায় রয়েছে। ১৭৯৭ সালে, ফরাসি বিপ্লবী সৈন্যরা মোনাকো দখল করে। এটি ১৮১৪ অবধি ধরে রাখে । যখন গ্রিমাল্ডি পরিবার ক্ষমতায় ফিরে আসে। আজ, মোনাকো সাংবিধানিক রাজতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত হয়, তবে এটি ফ্রান্সের একটি সুরক্ষা কেন্দ্র।

১৯৪৯ সালে,

প্রিন্স রেনিয়ার তৃতীয় মোনাকোর সিংহাসনে আরোহণ করেন । ১৯৫৬ সালে , সুন্দরী আমেরিকান অভিনেত্রী গ্রেস কেলিকে বিয়ে করেন। প্রিন্স রেইনার তৃতীয় এই এলাকায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং তার স্ত্রী শিল্পকলা উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করেন এবং ছোট জাতির জন্য গ্ল্যামার নিয়ে আসছে। একসাথে, তাদের তিনটি সন্তান ছিল । তারা হলেন ক্যারোলিন, অ্যালবার্ট এবং স্টেফানি। সর্বকনিষ্ঠ, প্রিন্সেস স্টেফানি ১ -এর দশকের বেশিরভাগ সময় একটি ট্যাবলয়েড প্রধান ছিলে । একাধারে, একজন গায়ক, ফ্যাশন মডেল এবং পার্টি গার্ল ছিলেন।

এরপর

প্রিন্স রেইনিয়ার তৃতীয় মোনাকোর সংবিধান সংস্কার, অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য । জুয়া খেলার উপর তার নির্ভরতা আয় ৯ শতাংশ রাজস্ব থেকে আজ তিন শতাংশে নামিয়ে আনার কৃতিত্ব পেয়েছেন। ১৯৮২ সালে, একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় গ্রেস কেলির আকস্মিক মৃত্যু ছিল । যা একটি শক যা সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

প্রিন্স রেনিয়ার তৃতীয় তার মৃত্যুর পরও মোনাকোকে শাসন করতে থাকেন । তিনি একজন সম্মানিত রাজা ছিলেন। তিনি ২০০৫ সালে তার পুত্র প্রিন্স দ্বিতীয় অ্যালবার্টকে সিংহাসনে বসানোর জন্য মারা যান।

পরিশেষে

মোনাকোর অর্থনীতি পর্যটন, জুয়া এবং ব্যাংকিং থেকে বেড়েছে। প্রিন্সিপালটির করমুক্ত অবস্থা এবং কোন আয়কর অনেক ধনী বাসিন্দাদের আকর্ষণ করেছে। ব্যাংকিং শিল্প এবং অর্থ ব্যবস্থাপনা, রাজস্বের 16 শতাংশ উৎপন্ন করে এবং অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মোনাকো তার ক্যাসিনোগুলির জন্য বিখ্যাত । দর্শনার্থীরা বিশ্বজুড়ে মার্জিত স্থাপনায় খেলার জন্য ভিড় করে। পর্যটন প্রায় ২৫ শতাংশ রাজস্ব উত্পন্ন করে এবং মোনাকো তার অতিথিপরায়ণতা এবং দুর্দান্ত খাবারের জন্য নিজেকে গর্বিত করে। চমৎকার ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু সুন্দর উপকূল উপভোগ করতে সারা বিশ্বের দর্শকদের আকর্ষণ করে ।

Check Also

পরীক্ষা EXAM

ভর্তি পরীক্ষা; গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা,নিয়োগ পরীক্ষা;এস এস সি;এইচ এস সি

পরীক্ষা EXAM পরীক্ষা ; ভর্তি পরীক্ষা, নিয়োগ পরীক্ষা , এস এস সি পরীক্ষা , এইচ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *