উসমানীয় সম্রাজ্রের উত্থান
আধুনিক তুর্কি বা তুর্কি সাম্রাজ্য বা অনেকের কাছে অটোমান সাম্রাজ্য নামে পরিচিত। এই সম্রাজ্রের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা উসমান গাজীর পিতা আরতুরুল গাজী।তিনি সেলজুক রাজ্যের প্রতি অনুগত ছিলেন। আরতুরুল গাজী সেলজুক কর্তৃক উওর পশ্চিম আনাতোলিয়া দ্বায়িত্ব পান। সেলজুক রাজ্য মোঙ্গল দ্বারা ধ্বংস হলে তিনি আনাতোলিয়ায় স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।ফলে আনাতোলিয়ায় কয়েকটি স্বাধীন রাজ্যে বিভক্ত হয় যাদের গাজী আমিরাত বলা হত। কয়েকটির মধ্যে অন্যতম ছিল আরতুরুল গাজীর পুত্র প্রথম উসমানের যা তিনি পিতার মৃত্যুর পর লাভ করেন। ক্ষমতায় আসার পর আনাতোলিয়ায় সব স্বাধীন ছোট ছোট রাষ্ট্র ;গুলোকে একতাবদ্ধ করে এক নতুন বাহিনী তৈরি করেন।
সাম্রাজ্যের উত্থানের ইতিহাস থেকে জানা যায়; উসমানের স্বপ্ন নামে একটি কিংবদন্তির কথা বলা হয়ে থাকে ;যার মাধ্যমে উসমান অনুপ্রাণিত হয়েছিল নতুন সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে। স্বপ্ন অনুযায়ী তার সাম্রাজ্য ছিল একটি বড় গাছ যার শিকড় তিনটি মহাদেশের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে; ও শাখাগুলি আকাশ আচ্ছাদিত করেছিল। বাস্তবিক পক্ষে তাই ঘটেছিল তার বংশধরেরা ; তার প্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্য এশিয়া ছাড়িয়েও ইউরোপের বেশিরভাগ এলাকা দখল করে নেয়।
আরো পড়তে পারেন সুলতান মুহাম্মদ আল-ফাতিহ ও কনস্টান্টিনোপল বিজয়
অটোমান সাম্রাজ্য
ডোমানিকের যুদ্ধ
এ যুদ্ধকে দ্বৈত যুদ্ধ বলা হয়। ১২৮৭ সালে সংগঠিত হয় এ যুদ্ধ। উসমানীয়দের ইতিহিাসে গুরুত্বপূর্ণ এক যুদ্ধ ছিল এটি, যা পরবর্তীতে উসমানীয় সাম্রাজ্য গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ যুদ্ধে কায়ি গোত্র যুদ্ধ করে বাইজেন্টাইনদের বিপক্ষে। উনমানীযদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন প্রথম উসমান ও বাইজেন্টাইনদের নেতৃত্ব দেন আয়া নিকোলা ও কালানোজ।
![অটোমান সাম্রাজ্য](https://nobobohni.com/wp-content/uploads/2021/02/অটোমান-সাম্রাজ্য.jpg)
যুদ্ধের ফলাফল
কায়ি গোত্র জয় লাভ করে। এই বিজয় কারাচাহিসার বিজয়কে তরান্বিত করে। এই হারের ফলে বাইজেন্টাইনরা ডোমানিক দখল করতে ব্যর্থ হয়। তবে এ যুদ্ধের এক আলোচিত তথ্য হল উসমান বে এর ভাই সাভচি বে শহীদ হয়।
বাফিয়াসের যুদ্ধ
২৭ জুলাই ১৩০২ ওসমানের অধীনে একটি অটোমান সেনাবাহিনীর মধ্যে এবং; জর্জ মোজালনের অধীনে বাইজেন্টাইন সেনাবাহিনীর মধ্যে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অটোমান বিজয়ের দ্বারা শেষ হয় এবং; বাইজেন্টাইনদের বিথিনিয়ায় চূড়ান্ত পরাজয় হয় ও তুর্কিরা বিথিনিয়া দখল করে নেয়।
১৩০২ সালের এক বসন্তে সম্রাট মাইকেল একটি অভিযান শুরু করেন যা দক্ষিণে ম্যাগনেসিয়ায় পর্যন্ত পৌঁছেছিল। তুর্কিরা,; মাইকেল এর বিশাল সেনাবাহিনীর দ্বারা বিস্মিত হয় এবং যুদ্ধ এড়ায়। মাইকেল তাদের মুখোমুখি হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তার জেনারেলদের অনাগ্রহে তা সম্ভব হয় নি। যার ফলে তুর্কিরা উৎসাহিত হয়ে তাদের অভিযান পুনরায় শুরু করেছিল। সেই সাথে মাইকেলকে কার্যত ম্যাগনেশিয়ায় বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। ফলে বিনা যুদ্ধে মাইকেলের সেনাবাহিনী বিলীন হয়ে যায়। মাইকেল সমুদ্রপথে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।
অটোমান সাম্রাজ্য
পরবর্তীতে মাইকেলের বাবা অ্যান্ড্রোনিকোস দ্বিতীয় পালাইওলোগোস , বাইজেন্টাইন বাহিনীকে প্রায় ২০০০ জন লোক পাঠিয়েছিলেন জর্জ মৌজালনের নেতৃত্বে। এদিকে উসমানীয় বাহিনীতে ছিল ৫০০০ অশ্বারোহীর একটি সৈন্যবাহিনী । উসমানীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠাতা উসমান গাজী ও তুরগুত আল্প। যুদ্ধের স্থান ছিল নিকোমিডিয়া এবং নিকিয়া এর মধ্যবর্তী স্থান বিথিনিয়ার ব্যাফিয়াস নামক স্থানে।
বাফিয়াস ছিল প্রথমত অটোমানদের প্রথম বড় বিজয় এবং; এর ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণের জন্য প্রধান তাৎপর্যপূর্ণ। বাইজেন্টাইনরা কার্যকরভাবে বিথিনিয়ার গ্রামাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে; তাদের দুর্গগুলো ও সমগ্র বিথিনিয়ার দখলদ্বারিত্ব উসমানীয়দের হতে এসে পড়ে। বাইজেন্টাইন পরাজয় খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর একটি বৃহত্তর দেশ থেকে ইউরোপীয় ; অংশের দিকে প্রবাহিত করে। এই বিজয় উসমানীয়দের মোনবল বাড়িয়ে দেয় ও তারা ক্রমে ক্রমে ইউরোপের দিকে অগ্রসর হয়
সুলতান হিসেব রাজত্বের সময় উসমান বাইজেনন্টাইন সাম্রাজের ;সীমানা পর্যন্ত তুর্কি বসতির সীমানা বিস্তৃত করেন।একটি উসমানীয় সরকার গঠন করেছিলেন যা সাম্রাজ্যের উপর ব্যাপক প্রভাব রেখেছিল। উসমানের মৃত্যুর পর তার পুত্র ক্ষমতা লাভ করেন। তিনি সাম্রাজ্যের পরিধি পশ্চিমের দিকে বৃদ্ধি করেন। ১৩২৬ সালে বুরসা দখল করেন ও; এটিকে রাজধানী হিসেবে তৈরি করেন।এর ফলে উওর- পশ্চিম আনাতোলিয়ায় বাইজেনন্টাইনরা নিয়ন্ত্রণ হারায়
অটোমান সাম্রাজ্য
১৩৮৯ সালে কসোভো জয় করার ফলে উসমানীয়দের ইউরোপের দিকে যাত্রা সহজ হয়। ১৩৯৬ সালে নিকোপোলিসের যুদ্ধে ব্যাপক ;ভিত্তিক ক্রসেড হিসেবে দেখা হয়।শেষ পর্যন্ত উসমানীরা জয় লাভ করে।১৩০০- ১৫০০ সালের মধ্যে উসমানীয়রা অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল জয় করে যার মধ্যে অন্যতম হলো সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ কর্তৃক কনস্টান্টিনোপল জয়। অটোমান সাম্রাজের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় এক জয়। এর ফলে বাইজেন্টাইন সম্রাজের সম্পূর্ণ ভাবে পতন ঘটে। সুলতান মুহাম্মদ কনস্টান্টিনোপল এ রাজধানী স্থাপন করেন যা বর্তমানে ইস্তাম্বুল ; নামে পরিচিত। এই বিশাল অঞ্চল গুলো নিয়ে অটোমান সাম্রাজ্য ছয়শ বছর ;রাজত্ব করে যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত টিকে ছিল
আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন নববহ্নি পেজ এ