নীল নদ দক্ষিণ থেকে উত্তরে

নীল নদ

আফ্রিকা মহাদেশেই বিশ্বের দীর্ঘতম নদ নীল নদ এর অবস্থান। সর্ববৃহৎ জলরাশি নিয়ে দক্ষিণ থেকে উত্তরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই নদ অতিক্রম করেছে। আজকে আমরা জানবো নীল নদ এর বিশাল পরিভ্রমণ সম্পর্কে। আশাকরি আমদের সাথেই থাকবেন।

নীলনদের পাড়ে সভ্যতা

আজ থেকে ৭০০০ বছর পূর্বে মানবজাতি যে দুটি সভ্যতা গড়ে তুলেছিল; তার একটি হলো মেসোপোটেমিয় সভ্যতা এবং অন্যটি প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা । প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা যে; নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল তা হলো নীল নদ। নীলনদ মিশরের জন্য এক প্রকার আর্শীবাদ হয়েই এসছিল। তারা এই নদ থেকে ব্যাপক উপকৃত হত, যারা তার তীরে বসবাস করত । তারা কৃষি কাজ থেকে শুরু করে নৌকা এবং জাহাজ নির্মাণ পর্যন্ত নতুন দক্ষতা এবং প্রযুক্তি বিকাশ করেছিল এই নদের অববাহিকায়। এমনকি তাদের বিশাল সভ্যতার সবচেয়ে স্বীকৃত ও বিষ্ময়কর স্মারক পিরামিড,; যা নির্মাণে নীল নদ ভূমিকা রেখেছিল। এছাড়াও নীল নদ মিশরীয়দের কাজের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল; ও তাদের ধর্ম ও সংস্কৃতির উপর প্রভাব বিস্তার করেছিল।

উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের রাজনীতির উপর নীল নদের প্রভাব; এতটাই উল্লেখযোগ্য যে তারা একটি আন্তরাজ্য সংঘর্ষের হুমকি দেয়; যা পুরো এলাকাটিকে সম্ভাব্য অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। অববাহিকার দেশগুলি নীল নদের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে, যা এই অঞ্চলের পানির একমাত্র প্রধান নবায়নযোগ্য উৎস; ফলস্বরূপ, এটি তাদের খাদ্য এবং জলের নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য।

পরিভ্রমন

পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম নদী নীলনদ যা অতিক্রম করেছে ৬৬৯০ কি.মি. পথ । এটি পূর্ব আফ্রিকার রুয়ান্ডা থেকে উৎপত্তি হয়ে ;উত্তর দিকে ১১ টি দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভূমধ্যসাগরে গিয়ে মিশেছে। নীর নদের গতিপথ সম্পর্কে দুটি ধারণা পাওয়া যায়। যার প্রথমটি হলো হোয়াইট নীল যা উত্তর মিশর ও সুদানের দিকে ধাবিত ছিল। হোয়াইট নীল আফ্রিকার বৃহত্তম হ্রদ ভিক্টোরিয়া থেকে শুরু হয়, যা উগান্ডা, কেনিয়া এবং তানজানিয়া দেশগুলিকে স্পর্শ করে। মিশরের অধিকাংশ পানির চাহিদা এই দিকেই পাওয়া যেত। দ্বিতীয়টি হলো ব্লু নীল যা আটবারা ও তাকাজের মত উপনদীতে ; বিভক্ত হয়ে ভূমধ্যসাগরের দিকে প্রবাহিত হয়েছিল।

প্রকারভেদ

পৃথিবীর বুকে যেসকল নদী দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হয়েছে তার মধ্যে নীলনদ একটি । এর দুইটি প্রধান উপনদী রয়েছে একটি হচ্ছে হোয়াইট নাইল এবং অন্যটি ব্লু নাইল । নীর নদের গতিপথ সম্পর্কে দুটি ধারণা পাওয়া যায়। যার প্রথমটি হলো হোয়াইট নীল যা উত্তর মিশর ও সুদানের দিকে ধাবিত ছিল। হোয়াইট নীল আফ্রিকার বৃহত্তম হ্রদ ভিক্টোরিয়া থেকে শুরু হয়, যা উগান্ডা, কেনিয়া এবং তানজানিয়া দেশগুলিকে স্পর্শ করে। মিশরের অধিকাংশ পানির চাহিদা এই দিকেই পাওয়া যেত। দ্বিতীয়টি হলো ব্লু নীল ; যা আটবারা ও তাকাজের মত উপনদীতে বিভক্ত হয়ে ভূমধ্যসাগরের দিকে প্রবাহিত হয়েছিল।


হোয়াইট নাইল ব্লু নাইল এর থেকে দীর্ঘতর যা ;আফ্রিকার মধ্যভাগের হ্রদ অঞ্চল তথা ভিক্টোরিয়া হ্রদের দক্ষিণে রুয়ান্ডাতে উৎপত্তি হয়ে হ্রদের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে

আরো পড়তে পারেন লাইন অফ কন্টোল(LOC) কি, কিভাবে এর উৎপত্তি

অপরদিকে ব্লু নাইল এর উৎপত্তি হয়েছে ইথিওপিয়ার তানা হ্রদ অঞ্চল হতে । উভয় উপনদী মিলিত হয়েছে সুদানের রাজধানী খার্তুমের নিকট; এবং তা সুদান এবং মিশরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভূমধ্যসাগরে পতিত হয়েছে ।

যার কারণে সুষ্ঠ পনি বন্টন নিয়ে দুটি উল্লেখযোগ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ; মিশর ও ব্রিটেন (১৯২৯) এবং মিশর ও সুদান (১৯৫৯) এর মধ্যে। উজানের দেশগুলির মধ্যে বর্ধিত সহযোগিতার ফলে বাঁধাই চুক্তি হয়েছে, যা নীলনদের সম্পদের উপর বরাদ্দ এবং নিয়ন্ত্রণ পুনর্গঠন করছে। এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে বাঁধ ;এবং সেচ নেটওয়ার্ক সহ উজানের উন্নয়নের বিস্তার ঘটেছে।

আরো পড়তে পারেন
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও ১৫ নতুন রাষ্ট্র
নাগারনো কারাবাখ – অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও তিক্ত শত্রুতা

যেকটি দেশের উপর দিয়ে গেছে

নীলনদ যে ১১ টি দেশকে অতিক্রম করেছে সেগুলো হলো রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, উগান্ডা, তাঞ্জানিয়া, কেনিয়া, কঙ্গো, ইথিওপিয়া,ইরিত্রিয়া, দক্ষিণ সুদান, সুদান, মিশর ।যেহেতু 11 টি দেশের মধ্য দিয়ে বিশ্বে সর্ববৃহৎ এ নদ অতিবাহিত হয়েছে তাই সব দেশেই এ মূল্যবান সম্পদ ভাগ করে নেবে , আর সেখানে বিতর্ক হতে বাধ্য। সেজন্য নীল বেসিন ইনিশিয়েটিভ সংক্ষেপে (এনবিআই), সব দেশগুলোর মধ্যে একটি আন্তসরকারি অংশীদারিত্ব, ১ ১৯৯৯ সালে গঠিত হয়েছিল। এটি নদীর সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং ভাগ করে নেওয়ার জন্য দেশগুলির মধ্যে আলোচনা ;এবং সমন্বয়ের একটি ফোরাম সরবরাহ করে থাকে যাতে পানির সুষ্ঠ বন্টন নিশ্চিত হয়।

নীল নদের উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য
• নীলের উৎপত্তি স্থল ও শেষ প্রান্তের মধ্যে এই নদের দূরত্ব সর্বাধিক।
• নীলের পানি বড় বড় পাথর ও বালুময় প্রান্তরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়; যার ফলে কোন শ্যাওলা ও ময়লা-আবর্জনা জমে থাকে না৷
• আর মজার বিষয় হলো অন্য নদ-নদীর পানি ; বাড়লে নীলের পানি কমে যায় ও নদীর পানি কমলে নীলের পানি বেড়ে যায়।
আমাদের ফলো করতে পারেন নববহ্নি পেজ এ

আমাদের ইউটিউব চ্যনেল নববহ্নি

4 COMMENTS

Leave A Reply

Please enter your comment!
Please enter your name here