শীতের সকাল রচনা ও শীতের সকাল অনুচ্ছেদ(বাংলা রচনা)1


Table of Contents

শীতের সকাল রচনা

প্রতিটি সকাল জীবনের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। রাতের নীরবতার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ব্যস্ত জীবনের নতুন দিন। বিশেষ করে সকালে পরিবেশটা অন্যরকম। শীতের সকাল বললেই আমাদের কল্পনায় ফুটে ওঠে প্রকৃতির অন্য এক চিত্র। আজকের সকালটা ধনীদের জন্য এক জিনিস আর গরীব ও অসহায় মানুষের জন্য আরেক জিনিস। আজকের আলোচ্য বিষয় শীতের সকাল প্রবন্ধ বা রচনা এসব বিষয় তুলে ধরে।
পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান জেনে নিন;
বাংলা রচনা; গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাংলা রচনা সমগ্র
মোবাইল ফোনের দাম 2022 বাংলাদেশ স্যামসাং ফোনের দাম
প্রবাদ বাক্য তালিকা; গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাংলা প্রবাদ বাক্য
সমার্থক শব্দ ভান্ডার; সমার্থক শব্দ;সুন্দর এর সমার্থক শব্দ

ভূমিকা:

আমাদের প্রিয় দেশ ছয়টি ভিন্ন ঋতুতে রঙিন। কিন্তু বছরের বেশির ভাগ সময়ই আমরা গরমে কাটাই। মাত্র দুই-তিন মাস আমাদের বাংলায় এক আশ্চর্য শীতলতা নেমে আসে। শরতের শেষে শীতের স্নিগ্ধ ছোঁয়া অনুভূত হয় সর্বত্র।
পৌষ, মাঘ মাসে কয়েকদিন প্রচণ্ড শীত থাকে, শীতের সকালে আমরা তা অনুভব করি। শীতের সকাল ঠাণ্ডা আর কুয়াশায় ঢাকা। সবকিছু খুব মেঘলা দেখায়। ঘাস শিশিরে ভেজা। সূর্য উঠলে শিশির বিন্দুগুলো মুক্তোর মতো। দরিদ্র মানুষ প্রচণ্ড গরমে এবং আলোর আগুনে খড় কুড়ায়। পশুরাও অসহায় হয়ে পড়ে। তারা ঘরের কোণে লুকিয়ে থাকে এবং বাইরের ঠান্ডা থেকে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করে। শীতের সকাল মানুষের মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি করে। কুয়াশায় চারিদিকে তাকালে মনটা কেমন বিষন্ন হয়ে যায়। শীতে আমরা একটু আচ্ছন্ন হলেও এই শীতের সকালটা অপূর্ব রূপ ধারণ করে। শীতের সকাল রাতের কালো পর্দা সরিয়ে সোনালী রোদ উপহার দেয়। শীতের সকাল রচনা

শীতের সকাল রচনা

শীতের বৈশিষ্ট্য:

ছয় ঋতুর পঞ্চম ঋতু শীতকাল। বসন্তের আগে চারিদিকে কুয়াশার চাদর নিয়ে শীত আসে। বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে পৌষ ও মাঘ হলো শীতকাল। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত শীতের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। কিন্তু বাস্তবে নভেম্বর থেকেই শীত অনুভূত হচ্ছে। দেশের গ্রামাঞ্চলে শহরাঞ্চলের আগে প্রথমে শীতকে ডাকা হতো। শীতকাল সাধারণত শুষ্ক থাকে, তবে কিছু জায়গায় মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টি হয়। এছাড়াও শীতের রাত দীর্ঘ হয়। এই সময়ে গড় তাপমাত্রা ১১ সেলসিয়াস থেকে ১৫সেন্টিগ্রেডের মধ্যে থাকে। দেশের উত্তরাঞ্চলে কোনো কোনো বছরে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ দেখা যায়, যা প্রায়শই প্রাণহানি ঘটায়।

শীতের সকাল রচনা
শীতের সকাল রচনা

শীতের সকাল:

শীতকালে ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকে। কখনও কখনও কুয়াশার চাদর এত ঘন হয়ে যায় যে সূর্যের আলো না আসা পর্যন্ত তা পৃথিবীর পৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারে না। ফলে যোগাযোগ ব্যাহত হয় । আর এতে মানুষের অনেক কষ্ট হয়। মাঝেমধ্যেই সারাদেশে শীত পড়ছে। বাচ্চারা ঠান্ডা থেকে রেহাই পেতে রোদে খেলতে বের হয়। শিশির বিন্দু ঘাসের উপর পড়ে এবং সকালের রোদে পাতাগুলি মুক্তোর মতো দেখায়। এই দৃশ্য বিশ্বকে নতুন জীবন দেয়। ঘরে ঘরে খেজুরের রস বিক্রিতে ব্যস্ত খেজুর বিক্রেতারা। অন্যান্য ঋতুর তুলনায় শীতের দিন অনেক কম। শীতকালে, রাত শেষ হয় এবং সকাল একটু দেরী হয় এবং সন্ধ্যাও খুব তাড়াতাড়ি হয়। মধ্যাহ্নের সূর্য বিকেলের দিকে যত কমছে ততই অন্ধকার ঘনীভূত হয়।
শীতের সকাল রচনা
বইয়ের টেবিলে বসে চাদরের বাইরে থেকে হাত বের করার চেয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়ার মধ্যেই সুখ পাওয়া যায়। রাতের খাবারের পর, কম্বলের নীচে ঘুমান, এবং একটি নতুন সকালের প্রত্যাশায়, রাত আরও দীর্ঘ হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পশুরাও অলস দিন কাটায়। ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে তারা সারাদিন ঘরে লুকিয়ে থাকে। কুকুর এবং বিড়ালছানা মানুষের বাড়িতে যায় এবং একটি উষ্ণ জায়গা খুঁজতে সেখানে লুকিয়ে থাকে। শীতে সারাদিন একটু অলসতায় কাটে তার। প্রকৃতির চেয়ে শীতের সকালে শীতের অনুভূতি বেশি হতে দেখা যায়।

শীতের সকাল রচনা

শীতের সকালের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য:

শীতের সকালগুলো অন্য পাঁচটি ঋতুর সকালের চেয়ে একটু ভিন্ন প্রকৃতির। শীতের সকালে মাঠ ঘাট সাদা কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায়। শিশিরে ভেজা মাঠের ঘাস, গাছের পাতা সব থরথর করে কেঁপে ওঠে উত্তরের হাওয়ায়। কুয়াশা ভেদ করে অবিরাম সূর্য যখন জ্বলে তখন প্রকৃতি ভিন্ন রূপ ধারণ করে। কুয়াশায় কাছের জিনিসগুলোও দেখা যায় না, সবকিছু ঢেকে যায়। টিনের চালে, গাছের ডালে বা পাতায় শিশির পড়ে। পাখির কিচিরমিচির শোনা যায় না।
খেজুরের রসের মিষ্টি গন্ধে সবাই সকালে ভাপানো পিঠা বা চিতই পিঠা দিয়ে নাস্তা করতে চায়। শীতকালে গাছের পাতা ঝরে পড়ে এবং ঝরে পড়ে। বাতাস যেমন শুকিয়ে যায়, তেমনি মানুষের মনও শুকিয়ে যায়। গ্রামের বাড়িতে সকালে খেজুরের রস আহরণের অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়। সেই রস বাড়িতে আনার পর বাড়ির মেয়েরা কেক তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শীতের সকালে কৃষকরা মাঠে গিয়ে পান্তা ভাত খায়। ডালিয়া ও চাঁদের মল্লিকা ফুলের উজ্জ্বল রং এই শীতের সকালের পরিবেশকে করে তোলে আরও রঙিন।

আরো পড়তে পারেন ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের তাৎপর্য রচনা (বাংলা রচনা)
শ্রমের মর্যাদা রচনা Dignity Of Labor Essay

গ্রামীণ জীবনে শীতের সকালের প্রভাব:

শহর ও গ্রামে শীতের নানা রূপ দেখা যায়। প্রকৃত গ্রামীণ জীবনে শীতের সকালের তাৎপর্য আরও স্পষ্ট। গ্রামাঞ্চলে শীতের সকালের জন্য আরেকটি আকর্ষণীয় উপাদান হল খেজুরের রস। খেজুরের রস পাত্রে সারারাত সংরক্ষণ করা হয়। এর স্বাদ যেমন ঠান্ডা। শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘরের বাচ্চাদের খড় জ্বালিয়ে শরীর গরম করতে দেখা যায়, বাড়ির মায়েরা ধানের তুষ আর খেজুরের রস দিয়ে নাস্তা করছেন। শীতে কৃষকের কুটিরের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখা যায়, ভোরবেলা গরম বিছানার আনন্দ ছেড়ে তারা কাজ শুরু করে। কৃষক সকালে মাঠে যায়, আর গৃহিণী ঘরের কাজ শুরু করে। আর ছোট ছোট শিশুরা উঠানে বসে সূর্যের অপেক্ষায়। দরিদ্র পরিবারে গরম কাপড়ের অভাবে শিশুরা হাত-পা বেঁধে আগুনের পাশে দাঁড়ায়। গ্রামীণ এলাকায় শীতের মাসগুলিতে প্রাদুর্ভাব আরও বেড়ে যায় বলে মনে হয়। কোথাও আবার বৈষ্ণবদের আখড়া, খোলা তালি বাজিয়ে প্রভাতী নাম সংকীর্তন।

শীতের সকাল রচনা

শীতের সকাল রচনা
শীতের সকাল রচনা

শহুরে জীবনে শীতের সকালের প্রভাব:

গ্রামীণ থেকে শহুরে এলাকায় প্রাদুর্ভাব আরও বেড়ে যায় বলে মনে হয়। সকালে বাড়ির কর্মকর্তাদের বারান্দায় খবরের কাগজ আর এক কাপ চা নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। বাচ্চাদের সকালে উঠে স্কুলে যাওয়ার তাড়া নেই। শহরের ইটের দালান শীতের সকালকে উপভোগ্য করে না। গ্রামের মতো এখানেও খেজুরের রসের গন্ধ, কেকের গন্ধ ডিজেল-পেট্রোলের গন্ধ নাকে পৌঁছতে দেয় না। সকালে অনেকেই পাশের পার্কে বেড়াতে যায়। অনেকেই আছেন যারা বেঞ্চে বসে শহরের কুয়াশা উপভোগ করেন। বাজারে সবজি ব্যবসায়ীরা সকাল থেকেই সবজি সাজিয়ে বসেন। সকালে চায়ের দোকানে চুলায় আগুন লাগে। গরম কাপড় ছাড়া ফুটপাতের বাসিন্দারা রাস্তার পাশে আগুন জ্বালিয়ে হাত-পা গরম করে। মধ্যবিত্ত মানুষ সকালে বস্তা হাতে নিয়ে বাজারে যায়। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের মাঠে হাঁটতে ও রাস্তায় ব্যায়াম করতে দেখা যায়। ধনী অভিজাত বাড়িতে শীতের সকালের অন্য রূপ।

শীতের খাবার:

শীত মানেই খেজুরের রস দিয়ে তৈরি নানা রকমের পিঠা। পিঠাপুলির দেশ আমাদের বাংলাদেশ। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে সকাল হতে না হতেই নানা রকমের পিঠা তৈরি শুরু হয়। মেয়েরা রস পিঠা, তেল পিঠা, ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, পাটিসাপ্তা ও ঝাল পিঠাসহ বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি করে তাদের দক্ষতা দেখায়। এ সময় গ্রামের কৃষকরা নানা জাতের সবজি চাষ করেন। বরই, কমলা, মাল্টা এগুলো শীতকালীন ফল।
শীতের সকাল রচনা

উপসংহার:

সময় বয়ে যায়। সে কারো জন্য থেমে থাকে না। খুব ভোরে, বিকেল হয়ে আসে। শীতের অল্প সময়ে, দুপুরের আগেই অন্ধকার হয়ে যায়। তারপর আবার সোনালী সকালের অপেক্ষায় যখন সূর্য ঝলমল করবে। প্রতিটি ঋতুর সকালের একটি আলাদা চেহারা। যদিও শীতের সকাল সব ঋতুর সেরা নাও হতে পারে, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে শীতের সকালের আবেদন অন্যান্য ঋতুর মধ্যে অনন্য।

শীতের সকাল অনুচ্ছেদ পড়তে পারেন এখানেশীতের সকাল অনুচ্ছেদ; অনুচ্ছেদ ও অনুচ্ছেদ রচনা1

আমাদের সাথে যুক্ত হতে লাইক দিননববহ্নি পেজ এ

Check Also

বৃষ্টি নিয়ে কবিতা

বৃষ্টি নিয়ে কবিতা। জীবন নিয়ে কবিতা

বৃষ্টি নিয়ে কবিতা ০১ কবিতা লিখেছেন: আতিক সিয়াম একটু বৃষ্টির প্রার্থনায় তপ্ত দুপুর ঘামে ভেজা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *