# সমাজের রীতিনীতি পরিবর্তন # অনামিকা #

কথাঃ আরিফা রুকু
পর্বঃ০১

গল্পের শুরু

# অনামিকা আর সিফাতের বিয়ের দেড় বছর পূর্ণ হলো। আজ সিফাতের শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার কথা।।।
# অনামিকা বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। তার বাবা মায়ের জন্য সেই ছেলে, সেই মেয়ে।অনামিকা সিফাত নামের একটা ছেলেকে ভালোবাসে। অনামিকা আর সিফাতের সম্পর্ক ৩ বছরের। দুজনেই এখন ভালো চাকরি করে। দুজনের সম্পর্কের কথা তাদের পরিবারকে জানায়। দুই পরিবারের ইচ্ছেতে বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়।।
# বিয়ের আগে অনামিকা সিফাতকে একটা শর্ত দেয়। শর্ত টা ছিলো,বিয়ের পর ৬ মাস অনামিকা সিফাতের বাসায় থাকবে আর পরের ৬ মাস সিফাত অনামিকার বাবার বাসায় থাকবে। সিফাত শর্তটাতে রাজি হয়ে যায়। কারণ সে ভাবে বিয়ের পর অনামিকার আর এসব শর্তের কথা মনে থাকবে না।

বিয়ে নিয়ে দুজনেই খুব খুশি

# বিয়ে নিয়ে দুজনেই খুব খুশি। ভালোবাসার মানুষকে সারাজীবনের জন্য পেলে কে না খুশি হয়? দুজনেই একে অপরকে খুব ভালোবাসত,একে অন‍্যের যত্ন নিতো,খেয়াল রাখতো।সব মিলিয়ে তাদের বিবাহিত জীবন খুব ভালো কাটছিলো।।।।
## অনামিকা হঠাৎ খেয়াল করলো যে সিফাতের আচরণ,কথা বলার ধরণ দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে। সিফাত আর আগের মতো অনামিকার খেয়েল রাখে না,আগের মতো আর সময়ও দেয় না। আগে অফিস থেকে বাড়ি ফিরে আগে তার অনামিকাকে খুঁজতো দেখার জন্য,না দেখতে পেলে নাকি ভালো লাগে না।
আর এখন অফিস থেকে বাড়ি ফিরে হাতের ব‍্যাগটা ফেলে দিয়ে চিল্লাতে লাগে,তার খাবার কেন এখনো রেডি হয়নি?কেন এত দেরি হয় খাবার বানাতে?বাসায় বসে বসে কি করো?সামান‍্য কাজ করতে এত সময় লাগে??
আরও কত কি….।।।
একদিন চা বানাতে গিয়ে চায়ের কাপটা অনামিকার হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে যায়।শব্দ শুনে অনামিকার শাশুড়ি,সিফাত দুজনেই ঘর থেকে ছুটে আসে।
শাশুড়িঃ সামান্য একটা চায়ের কাপ সামলাতে পারো না?,তাহলে আমার সংসার সামলাবে কীভাবে?এসব জিনিস তোমার বাবার টাকাই কেনা না,তাই দেখেশুনে কাজ কর।।

কথাগুলো বলে চলে যায়। সিফাত এতক্ষণ সবকিছু নীরব দর্শকের মতো শুনছিলো। একটু পর অনামিকার দিকে তাকিয়ে সিফাত বলছে,
সিফাতঃ মা ঠিকই বলছে,একটু দেখেশুনে কাজ করলেই তো পারো।।
কথাগুলো শোনার পর অনামিকা ভাবছে আর নিজেকে বলছে,, আমি তো এই ছেলে কে ভালোবাসিনি,এমন একজন কে বিয়ে করিনি যে আমাকে বোঝেনা,,!! আমি যাকে বিয়ে করছি,যাকে ভালোবাসি সে তো আমাকে বোঝে,,,!!…
এখন সিফাত আর আমার কথা ভাবে না,,
আগে যখন আমি ব‍্যাথ‍্যা পেতাম সে অস্থির হয়ে যেতো আমার জন্য।আর এখন,রান্নাঘরে হাত কেটে একাই কান্না করি,একাই ঔষধ লাগাই……

একদিন

একদিন সিফাতের আত্মীয়র বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা হলো।অনেকদিন পর দেখা হয়ে খুব ভালো লাগলো। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে সিফাত কে বাসায় ফেরার কথা জিজ্ঞেস করতেই বল্লো,
সিফাতঃ তুমি বাবা-মায়ের সঙ্গে বাসায় যাও,আমি রাতটা এখানেই থাকবো।।
সারারাত একাই কাটাতে খারাপ লাগলেও মেনে নিলাম….
কিছুদিন পর সিফাতকে বল্লাম,,
চলো,বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাবো,ভাবছি কয়েকদিন থেকেই আসবো…..
আমার কথা শুনে সিফাত বল্লো,,
সিফাতঃ যাবে ভালো কথা,থাকতে হবে কেন?দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসবে,,
অনামিকাঃ আমার বাবা-মায়ের ও তো ইচ্ছে করে তাদের মেয়েকে কাছে পেতে,,বিয়ে দিছে বলে কি আর তাদের সঙ্গে দেখা করারও অধিকার নাই??
সিফাতঃ মায়ের থেকে অনুমতি নিয়ে আসো,মা যদি যেতে দেয় তাহলে যাও।।।
আমি আমার শাশুড়িমাকে গিয়ে বলতেই আমাকে বল্লেন,
শাশুড়িঃ কয়েকদিন আগেই তো বিয়ে বাড়িতে দেখা হলো তোমার বাবা-মার সঙ্গে,আবার বাসায় যেতে হবে কেন?? এখন যেতে পারবে না,পরে সময় করে দেখা করে এসো……

আরো পড়তে পারেন রাজশাহী সিল্কের আদ্যোপান্ত

সেদিন খুব কান্না করছিলাম

সেদিন খুব কান্না করছিলাম,,নিজের বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করার জন্যেও নাকি সময়,সুযোগ খুঁজতে হবে,।।।
তারপরেও মেনে নিলাম…
এভাবেই দেড় বছর কেটে গেল……
অনামিকার দেয়া শর্ত মত সময় এলো সিফাতের শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার……..
আজ সিফাতের মন খারাপ। কারণ,তার বাবা-মা কে ছেড়ে সে ৬ মাসের জন্য শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে বলে।।। আর অনামিকা খুব খুশি।কারণ,সে ৬ মাস তার বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতে পারবে।।।।

এখন সিফাত তার শ্বশুরবাড়িতে।সিফাত এখন ঘর সামলায়,আর অনামিকা অফিসে যায়।বাসার সব কাজ এখন সিফাত কে করতে হয়। কারণ,এটাই তাদের শর্ত ছিল।
অনামিকা সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিসে চলে যায়।আর সিফাত তার শ্বশুর-শাশুড়ির জন্য খাবার বানাতে যায়।কিন্তু সিফাত ঠিক ভাবে খাবার বানাতে পারেনা। তখন অনামিকার মা সিফাত কে বলে,
অনামিকার মাঃ তোমার বাবা মা তোমাকে কিছু শেখাইনি??সামান‍্য রান্না করতেও জানো না?? তোমার বাবা মা তোমাকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে পারে,কিন্তু আমরা পারব না।।।।।
অনামিকার মায়ের কথাগুলো সিফাতের খুব খারাপ লাগে,,সে মন খারাপ করে ঘরে বসে থাকে। অনামিকা বাসায় এসে তার মায়ের থেকে সব জানতে পারে। অনামিকা সিফাতের সামনে জেতেই সিফাত বলে উঠে,
সিফাতঃ আমি তোমার মায়ের এসব কথা শুনতে পারব না,সামান‍্য কাজের জন্য উনি আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছে।তুমি উনাকে এভাবে কথা বলতে বারণ করে দেবে,…….
অনামিকাঃ তোমার মা ও তো আমাকে প্রায় কথা শোনাতো, যেকোন কাজেই খোটা দিত। তুমি কি তোমার মা কে কখনও বারণ করছিলা??করনি,, তাহলে আমি কেন করব??

সিফাত চুপ হয়ে গেল

কথাগুলো শোনার পর সিফাত চুপ হয়ে গেল।নিজে নিজেই কি যেন ভাবছে।।
কিছুদিন পর অনামিকাদের বাসায় কিছু প্রতিবেশী ঘুরতে আসে। অনামিকার মা তখন সবার সঙ্গে কথা বলছে। তাই সিফাতকে সবার জন্য চা বানাতে বলে।চা বানাতে গিয়ে হঠাৎ গরম পানি সিফাতের হাতে পরাই চায়ের কাপ হাত থেকে পরে ভেঙে যায়। শব্দ শুনে সবাই ছুটে আসে। তখন অনামিকার মা সবার সামনে সিফাত কে বলে,
অনামিকার মাঃ এইটুকু চা বানাতে গিয়ে এত দামি চায়ের কাপগুলো ভেঙে ফেল্লে,,এগুলো কিনতে তো টাকা লাগে নাকি??ভেবেচিন্তে কাজ করো।।।
রাগ দেখিয়ে অনামিকার মা চলে গেল। কথাগুলো শুনে সিফাতের চোখ থেকে পানি পড়ে যাচ্ছে।তখন সিফাতের মনে হচ্ছে,,,হাতে ফোসকা পরায় যে কষ্ট হচ্ছিলো, তার থেকেও বেশি কষ্ট হচ্ছে কথাগুলো শুনে।। সিফাতের তার মায়ের কথা খুব মনে পড়েছে। সিফাত তার মা কে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে,,
সিফাতঃ হ‍্যালো,মা। হাতে ফোসকা পরলে কি লাগাতে হয়??
সিফাতের মাঃ কেন বাবা? তোর কি হয়েছে? তোর হাতে কি ফোসকা পড়ছে?
সিফাতঃ ওই একটু আর কি মা।।।।
সিফাতের মাঃ তাড়াতাড়ি অনামিকাকে বল তোর হাতে যেন টুথপেস্ট লাগিয়ে দেয়।।
সিফাতঃ ও তো অফিসে ব‍্যাস্ত,।।আমি নিজেই লাগিয়ে নিব।তুমি চিন্তা কর না।।।।
সিফাতের মাঃ ঠিক আছে,,,। তুই কবে বাসায় আসবি বাবা? কতদিন হল তোকে দেখিনি!!!
সিফাতঃ (মন খারাপ করে)খুব তাড়াতাড়ি আসবো মা,।
কথা শেষ করে সিফাত নিজে নিজে ভাবছে,,কয়েকদিন তার বাবা মায়ের থেকে দূরে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে।তাহলে দিনের পর দিন অনামিকা কিভাবে থাকতো???
চলবে…….
পরের পর্বঃখুব তাড়াতাড়ি….

আমাদের সাথে যুক্ত হতে লাইক দিন নববহ্নি পেজ এ

Check Also

বৃষ্টি নিয়ে কবিতা

বৃষ্টি নিয়ে কবিতা। জীবন নিয়ে কবিতা

বৃষ্টি নিয়ে কবিতা ০১ কবিতা লিখেছেন: আতিক সিয়াম একটু বৃষ্টির প্রার্থনায় তপ্ত দুপুর ঘামে ভেজা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *