উত্তরাঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা র উত্তরণে প্রতিবন্ধকতা ; উত্তরের আমেরিকা

আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা র অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তো তখন করা যায় যখন সেটা নিয়ে আমরা জানি। অনেকে জেনেও তা নিয়ে কথা বলছে না কারণ যারাই উপরে উঠেছে তাদের অনেক কে বিচ্ছিন্ন সিস্টেমে চলতে দেখা গেছে। যেখানে কেউ এগিয়ে আসছে না। শিক্ষাব্যবস্থা তে ব্যক্তি হিসেবে যতটুকুর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন অন্তত তা পুরণ এর চেষ্টায় এগিয়ে আসা উচিত।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে এ ব্যবস্থা আরও ভয়াবহ যা কিনা ঢাকা বা দক্ষিণ এর অনেক মানুষ ই জানে না। শুরু থেকে জানা যাক-

উত্তরাঞ্চল শিক্ষাব্যবস্থা

এর অধিকাংশ জেলা, উপজেলায় ছেলে মেয়েরা অন্য জেলার ছেলে মেয়েদের থেকে প্রতিযোগিতার বাজারে এগিয়ে থাকা উচিত। কারণ শিক্ষার্থী যখন ক্লাস ৪ এ পড়ে তার খেলতে যাওয়া বারণ,তার ৫/৬ ক্লাসের বই পড়ার দিকে মনোনিবেশ বাড়ানোর প্রচেষ্টা শুরু হয়। আর ক্লাস ৫ এর পরীক্ষার পরে তো, তাকে রংপুর শহরে যেতে হয় কোচিং করতে। এতে শিক্ষার্থীর আগ্রহ থাকুক বা না থাকুক। কোচিং হলো ক্যাডেট কলেজে ভর্তির সাপেক্ষে। ক্যাডেট এ পড়া নিঃসন্দেহে একজন শিক্ষার্থীর জন্য উত্তম কিন্তু উত্তরের অনেক জায়গায় দেখা যায় ক্যাডেট এর কোচিং করা, রংপুরে থাকা,খেলাধুলো না করে আনকোরা বসে থাকা যেন একধরনের গৌরবের নাম।

অভিভাবক

অভিভাবকরা সন্তান কে বিচারে মানদন্ড হিসেবে দ্বার করায় এই পরীক্ষাকে। যদি পরীক্ষা দিতে পারে,বা কোচিং এ ভাল করতে পারে তাহলে ছেলে বা মেয়েটি অত্যধিক মেধাবী। তারা মনে করেন ক্যাডেট এ পড়া মানে ছেলে বা মেয়েটির ভবিষ্যৎ নিয়ে আর তাকাতে হবে না। বাবা- মা ও নিশ্চিত থাকে তাকে নিয়ে। কিন্তু ব্যাপার টা কি সত্যিই তাই কিনা? হতে পারতো ছেলেটির সাহিত্য বা পদার্থ বা আর্ট ভালো লাগে, যা সে করতে চায় অবাধ্য পরিবেশে। কিন্তু বাবা মা অথবা কোচিং এর শিক্ষকের চাপে সে আজ অত্যধিক নিয়মের মাঝে বড় হচ্ছে।

এর থেকে পরিত্রাণ এর উপায় অভিভাবক এর ই খুজে দেখা দরকার। সন্তান কে তার ইচ্ছায় পড়াশোনা করাবেন নাকি নিজের ইচ্ছায় বড় করবেন। ব্যক্তিগত ভাবে আমি কয়েকজন ক্যাডেট কে চিনি, যাদের দেখে আমি অভিভুত হই কারণ তাদের ব্যক্তিত্ব আর তাদের চিন্তাভাবনা। কিন্তু খুজে দেখলে জানা যায় তারা আজ যা করছে,সেটি অর্জন করতে গিয়ে তারা তাদের স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন। এর কারণ ক্যাডেট এর শিক্ষা ব্যবস্থা নয়। এর কারণ অভিভাবক আর রংপুরের অলিতে-গলিতে বেড়ে ওঠা ক্যাডেট কোচিং। কোচিং গুলো নিজেদের ব্যবসার বৃদ্ধির কারণে উপজেলা গুলোতে তথাকথিত নামধারী শিক্ষকদের ব্যবহার করে আর উপজেলার মেধাবী মুখ গুলো কে কোচিং নিয়ে যায়। এতে লাভ দু-পক্ষের ই। আচ্ছা এই তুমুল প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়া মেধাবীদের অবস্থা কি হয় ভাবুন তো?

যারা ইন্টারমেডিয়েট এর পরে ভার্সিটিতে ভর্তি হতে না পেরে; নিজেকে সামলাতে পারে না তাহলে এত ছোট বয়সে তারা কিভাবে সামলে ওঠে? অনেক ছেলে মেয়েদের জানি,যারা কিনা এই চাপে নিজস্বতাকেই হারিয়ে ফেলেছেন আর অভিভাবক ও সেই সন্তান কে নিয়ে লজ্জিত হয়ে থাকেন। অথচ সন্তানের জীবন কেবল শুরু মাত্র। অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের মাঝে এমন প্রবণতা নেই।

হয়তো এরই সুত্র ধরে উত্তরাঞ্চলের রংপুর কে আমেরিকা ভাবেন অনেকে। নইলে কলেজ বা স্কুল এ ভর্তির সময় তারা কেন ভাবেন না;তার ছেলে বা মেয়েটি ঢাকা সহ অন্য শহরের ভালো স্কুল কলেজেও পড়তে পারে?

আরো পড়তে পারেন চাকুরী পেতে যা যা করণীয়

কয়েকজন কে উপদেশ দিয়েছিলাম আদমজী ক্যান্ট,রেসিডেন্সিয়াল,সেন্ট জোসেফ,হলি ক্রস সহ বেশ কয়েকটি কলেজের কথা। কিন্তু তারা বলেছিলেন যে,রংপুর এর কলেজ গুলো নাকি বেস্ট যা তাদের শিক্ষক জানিয়েছেন আর সেখানে টিউশন করায় বিসিএস ক্যাডার শিক্ষক তাই ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা এবং শিক্ষা গ্রহন উভয় ই ভালো হবে এখানে। আর অপরপক্ষে ঢাকা অনেক দূর আর খরচ ও অনেক বেশি। আর পরিচিত কাউকে বলতে শুনি ঢাকার কথা। আমি অবাক হয়েছিলাম যে, যার কিনা নটরডেম, রাজউক,রেসিডেন্সিয়াল, হলিক্রস, ভিকারুননিসা তে পড়ার সামর্থ্য আছে সে এভাবে চিন্তা করছে। তাদের অভিভাবক দের সাথেও কথা বলে লাভ নাই। কারণ তাদের চোখে রংপুর হলো আমেরিকা আর সেখানেই আছে এম আইটি, হার্ভার্ড, প্রিন্সটন এর মতো প্রতিষ্ঠান। তাই তাদের অন্য শহরে যাবার প্রশ্নই আসে না।

আরো পড়ুন কেন বিজয় দিবসের ৪৫ দিন পর মুক্ত হয়েছিল মিরপুর

কেন ঢাকায় পড়তে বলছি আর কেন রংপুরে নয়-

ঢাকায়

শিক্ষার্থীরা মিশতে পারে সকল অঞ্চলের মানুষের সাথে যা কিনা নিজেকে জানার জন্য জরুরি। সারা ঢাকায় একদিন ঘুরলে নিজের পরিচিত কাউকে পাওয়া যাবে না সত্যি কিন্তু অনেক অনেক সুযোগ পেয়ে যাবেন ভালো এবং মন্দ। আর কলেজ গুলোতে শিক্ষক এর পাঠদান অপেক্ষা তাদের নিজস্ব শিক্ষাব্যবস্থা আর বিভিন্নরকম সুযোগ সত্যিই একজন শিক্ষার্থীর জন্য অত্যন্ত জরুরি। যেমন ধরেন অলিম্পিয়াড যা কিনা একজন শিক্ষার্থী জানার ক্ষেত্র কে বাড়িয়ে দেবে,আবার ক্লাব এক্টিভিটি যা শিক্ষার্থীর নিজেদের লিডারশীপ যোগ্যতা কে এগিয়ে রাখবে। এমন কি তারা কলেজ থেকেই শিখছে ইমেইল করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ যোগাযোগ; স্পন্সরশীপ যোগাড় করে বড় আয়োজন করা ইত্যাদি অনেক কিছু।

অপরদিকে এই সুযোগ গুলো অনেকাংশে কম রাত রংপুরে যার কারণ হিসেবে বলছি যারা ঐ অঞ্চল থেকে উঠে আসছে তারা নতুন কিছু করতে চাচ্ছেন না আর যারা করতে চায় স্থানীয় অনেকেই সেটার ঘোর বিরোধীতা করেন। আর শিক্ষার্থীরা সবাই কাছাকাছি এলাকার অর্থাৎ পরিচিত হবার সুবাদে, তাদের পরিচিতি বাড়ে না। তারা নিজেদের মধ্যেই দেখা সাক্ষাত করে। আর উদ্যোগ নেবার ক্ষমতা খুব বেশি গড়ে না। এই শিক্ষার্থীরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখে তখন তারা তাদের পাশের বন্ধু,ভাই কে দেখে অবাক হোন। তারা অনেক কিছু জানেন যা আমরা জানি না। তারা অনেকেই ডিপ্রেশনে চলে যায়। যার খবর পরিবার রাখে না। শেষ পর্যন্ত তাদের নাম হয় পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের মানুষ।

আসলে

আসলে পিছিয়ে নেই উত্তরাঞ্চল, পিছিয়ে দিচ্ছে তারা যারা সেখান থেকে উঠে এসেছে অথচ উত্তরাঞ্চলের শিক্ষার্থী জন্য কিছু করছে না। আর অভিভাবক রাও না বুঝে কোচিং বা কোচিং এর ঠিক করা শিক্ষক এর প্ররোচনায় হুমকির মুখে ফেলছে প্রিয় সন্তানের ভবিষ্যৎ।

বলছি না সবাইকে ঢাকায় আসতে বরং সুযোগ গুলো রংপুরেও সৃষ্টি করুন। চিন্তাধারা বদলান যে খরচ বেশি। রংপুরে পড়তে আপনি আপনার সন্তান কে যে,সাপোর্ট দিচ্ছে তা দিয়েও অন্য শহরে সম্ভব। আর ইচ্ছা থাকলে উপায় ঠিক বের হবে। একদিন সেই উপায় নিয়ে লিখবো। সর্বোপরি, শিক্ষাগ্রহন কে মুখ্য করুন আর সে শিক্ষা যেন নিজের ইচ্ছা মতোই হয়। এমন টা যেন না হয়,কলেজ পর্যন্ত ভালো করে বিশ্ববিদ্যালয় এ এসে ডিপ্রেশন এ নিজেকে হারিয়ে ফেলেন আমাদের তরুণরা। বরং যেখানেই পড়ুক তাদের পুথিগত শিক্ষা আর কোচিং এর প্ররোচনায় না হারিয়ে দিয়ে। তাদের জ্ঞান লাভের ব্যবস্থা করুন। তাদের বিভিন্ন ধরনের মানুষ থেকে বাস্তব জ্ঞান নেবার সুযোগ দিন।তাদের উপর আপনার স্বপ্ন না,চাপিয়ে তাদের স্বপ্ন কে লালন করুন।

ধন্যবাদ সবাইকে

Md Naimur Rahman

CEO

ChemFusion

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *